নজরুল ইসলাম তোফা: ভ্রমণ বিলাসী মন, হঠাৎ করেই তাতো জাগ্রত হয়নি, দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত বলাই চলে।রাজশাহীর “ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব” সমগ্র বাংলাদেশের অসংখ্য জায়গাতে ভ্রমণ করেছে এবং আগামীতেও এই ভ্রমণ অব্যাহত থাকবে।
তাই তো ”রাজশাহী টু টাঙ্গাইল” ভ্রমণ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব এর কর্ণধার মহম্মাদুল হাসান শুপ্ত ভাই সহ সাকিব ভাই, হারুন ভাই, হাসান সিজার ভাই, অভীভাই, সঞ্জু ভাইয়ের মতো অনেকেই। এভ্রমণে ছিল ইয়ামাহা কম্পানির ১৯টা বাইক ও মোট সদস্য ছিল ২২ জন। যদিও তারা দুই দিন আগ থেকে বিশাল প্রস্তুতি নিয়েছে কোথাও যেন কোনো সমস্যা না হয়। এমন ভ্রমণের আগের রাতে যেন দুচোখে কারো তেমন ঘুম ছিল না, কারণ হলো কখন যে ‘সকাল হবে’। সকাল সাড়ে ৬ টায় একত্রিত হয়ে সাতটায় রওনা দিয়েছে টাঙ্গাইলের উদ্দ্যেশে। সবাই দল বেঁধে ”ইয়ামাহা বাইক” চালিয়ে যাওয়ার অপরূপ দৃশ্যটাকে যেন ভিডিও করেছে। সকাল ৭টায় চলছে বাইক, সেইসময় আকাশে ছিল ঝকঝকে রোদ, হঠাৎ করে রিমঝিম বৃষ্টি অবিরাম, ভিজিয়েছে দেহ সাথেই পথ-ঘাটও যেন বুঝি পূর্ণ আষাঢ় মাসের রূপ নিয়েছিল। নাটোরের বাইপাস পার না হতেই বৃষ্টি শুরু, যেহেতু ভ্রমণটা পূর্ব পরিকল্পিত হওয়ায় সবার কাছে রেইনকোট ও পর্যাপ্ত সেফটি গিয়ার ছিল।
যাকগে এবার আসা যাক ‘সকালের নাস্তার প্রসঙ্গে’, নাস্তা করার উদ্দেশ্যে সিরাজগঞ্জের ফুড ভিলেজে বিরতি। সেখানেই দিক নির্দেশনা দেয়া হলো, যমুনা সেতু বা বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর সবাই দাঁড়াতে পারবে- অন্য কোথাও নয়। নাস্তাটা শেষ করার পর পর সিরাজগঞ্জ হতে টাংগালের উদ্দেশ্যে ভ্রমণের ল়ং যাত্রা শুরু হয়। যমুনা সেতুর টোল দিয়ে সকলে মিলে একসাথে যমুনা সেতুর সৌন্দর্য এবং যমুনা নদীর পানি দেখে চোখ জুড়িয়েছে। নানান প্রকার ছবি সহ ভিডিও সেখানেই সবচেয়ে বেশি করেছে। আর সেখানে বেশকিছু মানুষের সঙ্গেও কথা হয়, তাদের তথ্য মতেই বলা যায়, ‘যমুনা বহুমুখী সেতু কিংবা যমুনা সেতু’ বাংলাদেশের যমুনা নদীর উপর অবস্থিত সড়ক ও রেল সেতু। ৪.৮ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এমন সেতুটি বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার “২য় একটি দীর্ঘতম সেতু”। ১৯৯৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল। এটি যমুনা নদীর পূর্ব তীরেই ভূঞাপুর (ভুয়াপুর) ও পশ্চিম তীরের দিকটা সিরাজগঞ্জকে সংযুক্ত করেছে। এটি বিশ্বে ১১ তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৬ষ্ঠ দীর্ঘতম সেতু। ‘যমুনা’ বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীর মধ্যেই যেন বৃহত্তর ও প্রবাহিত জল আয়তানিক পরিমাপের দিক থেকে বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম। সেতুটি বাংলাদেশের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যেই যেন একটি কৌশলগত সংযোগ প্রতিষ্ঠিত করেছে। এটি অত্র অঞ্চলের জনগণের জন্যই বহুবিধ সুবিধা সৃষ্টি করেছে।বিশেষত অভ্যন্তরীন পণ্য ও যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা দ্রুত করেছে। পরবর্তিতে এই সেতুটার নামকরণ করা হয়েছে “বঙ্গবন্ধু সেতু”। যমুনা সেতু স্থাপনের জন্য প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৪৯ সালে। জানা যায় যে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রথম এই উদ্যোগ নেন। কিন্তু, তখন তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছিল না। ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবরে কাজ আরম্ভ হয়েছিল আর তা ১৯৯৮ সালের ২৩ জুনে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সেতুটার উপর বাইকাররা অন্যরকম একটা ফিলিংস এর ভিতরে চলে যায়। এতো ‘মনোরম পরিবেশ’ ছেড়ে তারা নড়তেই চাইছিল না।
সেখান থেকে টাঙ্গাইল তো মেতেই হবে। সে কথা মাথায় রেখে সকলকে পরামর্শ দিয়ে ছিল রাইডার্স ক্লাবের পরিচালক শুপ্ত ভাই। তিনি বলেন, খুব দ্রুতগতি সম্পূর্ণ বাইকাররাই আগে আগে থাকবে। আর নিয়ন্ত্রণে রেখে বাইক গুলো দ্রুতগতিতে চালাবে। অতিরিক্ত গতি বাড়িয়ে চলছে তাদের বাইক। তথা সময়ের মধ্যে সবাই যেন টাঙ্গাইল শহরে পৌঁছেছে। সেখানে শৈশব ভাই নামের এক ব্যক্তি ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব টাঙ্গাইলের মডারেটর, তিনি লম্বা স্বাস্থ্যবান, সুদর্শন চেহারার সু-পুরুষ। রাজশাহীর ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের সবাইকে রিসিভ করার জন্য থাকবে কিন্তু তিনি সেখানে নেই। কারণটা হলো শুক্রবার দিন হওয়ায় তিনি “জুম্মার নামাজ” আদায় করতে গেছে। পরে তিনি এসে সবাইকে এক হোটেলে উঠানোর বন্দোবস্ত করেছে। সেই হোটেলে ১৯টি বাইক গ্যারেজ করে ফ্রেশ হওয়ার জন্যই যার যার রুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়েও দেখে বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ নেই। ইতিমধ্যেই ‘ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব’, টাঙ্গাইল এর এডমিন ‘মিজান ভাই’ও রাজশাহীর বন্ধুদের মাঝেই উপস্থিত হন। আর তখনই আরম্ভ হলো এক “জমজমাট আড্ডা”। সবাই মিলে অসাধারণ একটি আড্ডা হয়েছিল হোটেলের করিডোরে। এদিকে কখন যে বিকেল হয়েছে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বলে টের পাওয়া যায়নি। স্মরণ হলো টাঙ্গাইল এসে পোড়া বাড়ির ‘চমচম’ না খেলে চলে। তাই আবার সেই শৈশব ভাই, মিজান ভাই, কবির ভাইকে সহ সবাইকে নিয়েই গেলো বিখ্যাত সেই পোড়াবাড়ির সুস্বাদু চমচম খেতে। তার পর সকলে মিলেই বাইক নিয়ে ডিসি লেক ও ডিসি পার্ক এর উদ্দেশ্যে রওনা। খুবই গোছানো জায়গা ও রাত্রে বেলা লাইটিং এবং তার পরিবেশ দেখে সবাই যেন মুগ্ধ। সবার আফসোসটা এক জায়গায় ছিল তা হলো, সেখানে দিনের বেলা যেতে পারলেই হয়তোবা আরো অনেক কিছু উপলব্ধি করতে পারতো।